অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফ্রান্স সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আন্তর্জাতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্মেলনে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করতে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ইউরোপের দেশটিতে যাবেন তিনি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উদ্যোগে আয়োজিত এই শীর্ষ সম্মেলনে ওপেনএআইয়ের প্রধান স্যাম অল্টম্যান ও ডিপসিকের এর প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং উপস্থিত থাকবেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র জানান, প্যারিসে অনুষ্ঠিত এই এআই সম্মেলনে ইউরোপের প্রযুক্তি নেতৃত্বকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া বলছে, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভারতের সঙ্গে প্রযুক্তি খাতে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে চায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে ভারতকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখতে চাইছে ইউরোপ।
মোদী ও ম্যাক্রোঁর মধ্যে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০২৩ সালে মোদীকে ফ্রান্সের বাস্তিল দিবসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, আর ম্যাক্রোঁ ২০২৪ সালে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে অংশ নেন।
এআই সম্মেলন শেষে মোদীকে নিয়ে ফ্রান্সের মার্সেই শহরে যাবেন ম্যাক্রোঁ। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরটি ইউরোপের নতুন বাণিজ্য কেন্দ্র হতে পারে বলে দাবি করেন অনেকেই। মার্সেইকে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোরের (আইএমইসি) প্রবেশদ্বার হিসেবে গড়ে তুলতে চায় ফ্রান্স, যা মোদীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।
২০২৩ সালে জি-২০ সম্মেলনে মোদী এই বাণিজ্য পথের ঘোষণা দেন, যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) পাল্টা পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ভারত বর্তমানে ইউরোপের কাছে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ইইউ ও ভারত এখন চীন-যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসতে চায় বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, তিনি তার নতুন মেয়াদের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর করবেন ভারতে। সেখানে দীর্ঘদিনের আলোচিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চূড়ান্ত হতে পারে রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তি : ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক ভারত এখন রাশিয়ার পরিবর্তে পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে। ধারণা করা হচ্ছে, মোদীর এবারের সফরে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ২৬টি রাফাল-এম যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে।
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাজ কুমার শর্মা বলেন, এই রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতের সামরিক শক্তি বাড়াবে। এছাড়া, স্পেন, ইতালি ও পোল্যান্ডও ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবসায় আগ্রহী।
নিক্কেই এশিয়া বলছে, ভারতের সঙ্গে ইউরোপের বর্ধিত সম্পর্ক কেবল প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অর্থনীতি ও কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে। মোদীর এই সফরের মাধ্যমে ভারত-ফ্রান্স সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
Leave a Reply